রবিবার ২৭ জুলাই ২০২৫ - ১৭:৪৮
আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তির রহস্য: সঙ্কটে আত্মিক দৃঢ়তা

মানুষের জীবন কখনোই সরল রৈখিক নয়। রোগ-শোক, দুঃখ-সংকট, ভয়-উৎকণ্ঠা—এইসবই আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এমন সময়েও কেউ কেউ থাকেন, যাঁরা বিচলিত হন না, ভেঙে পড়েন না, বরং এক গভীর প্রশান্তি ও আত্মিক স্থিতিতে নিরবিচল থাকেন। এই আশ্চর্য শক্তির উৎস কোথায়? কিভাবে সম্ভব হয় অন্ধকার সময়েও এমন আলো ধারণ করা?

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামী শিক্ষায় এর একমাত্র উত্তর হলো—আল্লাহর স্মরণ (ذکر الله)।

আল্লাহর স্মরণেই হৃদয়ের প্রশান্তি
কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বলেন:
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি পায়।” [সূরা রা‘দ: ২৮]

এই আয়াতটি কেবল একটি আধ্যাত্মিক নীতি নয়, বরং তা বহু ঈমানদার ব্যক্তিত্বের জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে।

এক অনুপ্রেরণামূলক দৃশ্য: আলী আখুন্দ ক্বাযী (রহ.)

প্রখ্যাত মুফাসসির ও দার্শনিক আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) এক হৃদয়ছোঁয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমি একবার মসজিদে কুফায় গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম, মরহুম আলী আখুন্দ ক্বাযী এবং তাঁর পুরো পরিবার জ্বরে আক্রান্ত। তবে যখন নামাজের সময় হলো, হযরত ক্বাযী যথারীতি প্রথম সময়েই দাঁড়িয়ে গেলেন নামাজে।
এশার নামাজের পর তিনি এমন একাগ্রতায় ‘آمَنَ الرَّسُولُ’ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন যেন কোনো দুঃখ-যন্ত্রণাই তাঁর জীবনে নেই। তিনি সম্পূর্ণ প্রশান্তি ও আত্মসমর্পণের সঙ্গে জিকিরে মগ্ন ছিলেন।”

এটি শুধু একজন মানুষের ঘটনাই নয়, বরং তা এক মুমিন আত্মার প্রতিচ্ছবি—যে তার হৃদয়ের প্রশান্তিকে আল্লাহর স্মরণে গড়ে তোলে, বাহ্যিক বিপদ নয়।

কীভাবে এমন প্রশান্তি অর্জিত হয়?

১. নামাজকে জীবনের কেন্দ্র বানানো: যারা কঠিন সময়েও নামাজ ছাড়ে না, নামাজ তাদের আশ্রয় হয়ে ওঠে।

২. কুরআনের আয়াত ও অর্থ নিয়ে গভীর ভাবনা (تدبر): শুধু মুখে নয়, আয়াতের অর্থ ও তাৎপর্য হৃদয়ে ধারণ করলে তা বাস্তব জীবনে সান্ত্বনা ও শক্তি দেয়।

৩. জিকির ও দুআর মাধ্যমে আত্মাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া: আল্লাহর নাম বারবার উচ্চারণ করলে হৃদয় প্রশান্ত হয়, দুআ করলে অন্তর প্রশিক্ষিত হয় ধৈর্যে ও নির্ভরতায়।

আধুনিক জীবনে প্রাসঙ্গিকত
আজকের দুঃসময়, যুদ্ধ, মহামারি, পারিবারিক সমস্যা, মানসিক চাপ—সবই মানুষের মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের এক সহজ ও পরিপূর্ণ সমাধান দিয়েছে—আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন।

একজন মানুষ হয়তো ডাক্তার দেখাবে, ওষুধ খাবে, পরামর্শ নেবে—সবকিছুই প্রয়োজনীয়। কিন্তু আত্মা যদি অস্থির থাকে, যদি সে নিজের অস্তিত্বকে কোনো আশ্রয়ে না পায়, তাহলে সেই শান্তি অসম্ভব। এই আশ্রয় হলো আল্লাহ।

আল্লাহর স্মরণ কেবল পুণ্য অর্জনের উপায় নয়, বরং এটি জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার মুহূর্তে একমাত্র আলো। আলী আখুন্দ ক্বাযীর মতো বহু আল্লাহওয়ালা মানুষ তাঁদের জীবনে প্রমাণ করেছেন—আল্লাহর স্মরণে হৃদয়ের প্রশান্তি নিছক আখিরাতের প্রস্তুতির বিষয় নয়; এটি দুনিয়াতেও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় আত্মিক সম্পদ।

সুতরাং, আসুন আমরা নামাজ, কুরআন ও জিকিরের মাধ্যমে নিজেদের প্রশান্ত অন্তর গঠনে অগ্রসর হই—যাতে দুঃখ আসলেও তা হৃদয়কে দোলাতে না পারে।

[সূত্র: উসওয়ায়ে আরেফান, পৃষ্ঠা- ২৬]

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha